
টুভালু হল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মধ্যে একটি স্বাধীন দ্বীপ দেশ।
এর ৯টি দ্বীপ আছে যা ছোট, পাতলা ও জনবহুল। রাজধানীর নাম ফুনাফুটি।
আমি জানি ৯০% পাঠক এই দেশের নাম শুনেন নি। সংখ্যাটা বেশি ও হতে পারে। চলুন জেনে আসি এই দেশ সম্পর্কে।
এখানে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল, এই দেশে বাংলাদেশিরা ১ মাসের ভিসা অন এরাইভাল পায়।
মানে আপনি টিকেট কেটেই চলে যেতে পারবেন এবং ভিসা আপনাকে এয়ারপোর্টেই তারা পাসপোর্টের সাথে সংযুক্ত করে দিবে।
এই লেখার শেষের দিকে কথা হবে কিভাবে এবং কোন জায়গা থেকে যাওয়া যায় এই ছোট্ট অজানা দেশে।

শুভযাত্রার “অজানা দেশ পরিচিতি” সিরিজের প্রথম দেশ টুভালু হবার একটা মজার কারণ আছে।
আমার কাজের জায়গা অনলাইন হওয়ায় ডোমেইন হোস্টিং এইসব নিয়েই আমার পরে থাকা হয়।
প্রত্যেক দেশের রিজিওনাল ডোমেইন থাকে যেমন ইউটিউব.কম.বিডি এখানে বিডি (BD) বাংলাদেশের রিজিওনাল ডোমেইন।
ইন্ডিইয়ার ইন (IN) ইত্যাদি। টূভালুর কপালে জুটেছিল .TV ডোমাইনটি।
আর এই থেকেই তাদের বসে বসে আয় অনেক টাকা। কিভাবে বলছি, দুনিয়ার যত টিভি চ্যানেল আছে তারা সবাই চায় তাদের ডোমেইন এর শেষে টিভি ব্যাবহার করতে।
ত এই ছোট দুটি অক্ষর ব্যাবহার করতে এই ছোট্ট দেশ টুভালুকে দিতে হয় অর্থ।
আরও মজার ব্যপার হল সাড়ে ১১ হাজার জনগনের এই দেশের আয়ের বিশাল উৎস এই ডোমেইন বিক্রি করা।
টুভালুর ইতিহাস
টুভালুর প্রথম বাসিন্দারা ছিলেন পলিনেশিয়ানরা, তাই টুভালুর লোকদের উৎপত্তিগুলি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
ক্যাপ্টেন এবং চার্টমেকাররা ইউরোপীয় জাহাজ পরিদর্শন করার সময় পৃথক দ্বীপগুলিকে বিভিন্ন নাম দিয়েছিলেন।
1819 সালে ফুনাফুতি(টুভালুর রাজধানী) দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল এলিসের দ্বীপ।
ব্রিটেন এবং জার্মানির মধ্যে একটি চুক্তির ফলে 19 শতকের শেষদিকে গ্রেট ব্রিটেনের অধীনে আসে এই দেশ.
এলিস দ্বীপপুঞ্জকরা গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জ থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীনতার পরে কিরিবাতিতে পরিণত হয়ে টুভালু হিসাবে পৃথক ব্রিটিশ নির্ভরতা মর্যাদার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
টুভালু 1978 সালের 1 অক্টোবর কমনওয়েলথের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। 5 সেপ্টেম্বর 2000-এ টুভালু জাতিসংঘের 189 তম সদস্য হয়।

টুভালুর অর্থনীতি
বেশিরভাগ টুভালুয়ানরা কৃষক এবং বিদেশে কর্মরত স্বজনদের কাছ থেকে রেমিটেন্স থেকে জীবন যাপন করে থাকে এবং রফতানির জন্য স্বল্প পরিমাণে কোপরা উত্পাদিত হয়।
কোপরা নারিকেল শুকিয়ে তৈরি করা হয়। ক্যারিবিয়ান ও ফিজিতে এই কোপরা বেশ জনপ্রিয় এমনকি আমি ভিয়েতনাম ও কম্বডিয়াতে এই কোপরা নিজেই খেয়েছি।
স্টাম্প বিক্রি এবং বিদেশী ফিশিং বহর থেকে ফি সংগ্রহ করেও আয় করা হয়।
তবে দেশটি বিদেশী সহায়তার উপর নির্ভর করে। এটি তার বেশিরভাগ খাদ্য, জ্বালানী এবং উত্পাদিত পণ্য আমদানি করে।
ফিজি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং জাপান এই দেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে।
সম্প্রদায় ভিত্তিক সমবায় সমিতিগুলি খুচরা বিক্রয় পরিচালনা করে যদিও টুভালু অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রা ব্যবহার করে এবং তাদের নিজস্ব মুদ্রাও রয়েছে ।
একটি মাত্র ব্যাংক আছে। টুভালু ও কিরিবাতি এবং ফিজির সাথে বিমান সংযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক শিপিংয়ের জন্য।
এটি অনিয়মিত আঞ্চলিক পরিষেবাদির উপর নির্ভর করে। আন্তঃসাগর ভ্রমণের জন্য সমুদ্র বিমানগুলি ব্যবহৃত হয়ে। ফোনাফুটিতে মোটরসাইকেলের প্রচলন রয়েছে তবে অটোমোবাইল খুব কম।

সরকার ও সমাজ ব্যাবস্থা
টুভালু কমনওয়েলথের মধ্যে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র (একজন গভর্নর-জেনারেলের মাধ্যমে) রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।
সরকার একটি সংসদীয় গণতন্ত্র, সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকার দ্বারা নির্বাচিত হয় ।
কোনও রাজনৈতিক দল নেই: প্রধানমন্ত্রী আইনসভা দ্বারা এবং নির্বাচিত হন। টুভালু দক্ষিণ প্যাসিফিক ফোরামের সদস্য।
সরকার সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করে এবং টুভালু চার্চের সাথে একটি যৌথ ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল সার্টিফিকেট স্তরে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে ।
কয়েকজনকে উচ্চতর শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। চিকিত্সা সুবিধাগুলি ফুনাফুটি কেন্দ্রিক, তবে অন্যান্য সমস্ত দ্বীপগুলিতে প্রশিক্ষিত মেডিকেল কর্মীদের ক্লিনিক রয়েছে।
টুভালুর পর্যটন
টুভালু খুবই ছোট একটি দেশ। দেশটিতে চলাচলের তেমন ভালও কোন ব্যবস্থা নেই যদিও ছোট হওয়ায় আপনার কোন সমস্যা হবে না।
ফুনাফুটিতে, মূল দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে মোটর বাইক দ্বারা ।
একদিনে ১০ ডলার ভাড়া নেওয়া বা অন্য কারও সাথে শেয়ারে ঘুরে দেখা যায় । কেউ হেলমেট পরে না তবে লোকেরা ধীরে ধীরে চলাচল করে এবং সেখানে খুব কম ট্র্যাফিক থাকে। টুভালুর বাইরের দ্বীপে কোনও ফ্লাইট নেই; তারা ফুনাফুটি থেকে যাত্রীবাহী ফেরিতে যাতায়াত করে এবং নৌকায় করে অন্য আইল্যান্ড এ যাওয়া দীর্ঘ ভ্রমণ হতে পারে।
প্রতিবছর প্রায় 1600 পর্যটক টুভালুতে যান (বেশিরভাগ ফিজি, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড থেকে) এবং কয়েকজন বহিরাগত (বেশিরভাগ বিদেশী সহায়তা কর্মী),।
এখানে সামান্য অবকাঠামো রয়েছে, কোনও পর্যটন তথ্য কেন্দ্র নেই, কোনও ট্যুর গাইড নেই, কোনও সংগঠিত কার্যক্রম নেই।
তবে ফুনাফুটিতে একটি হোটেল এবং প্রায় এক ডজন অতিথি-বাড়ি এবং অন্যান্য দ্বীপের হোমস্টে রয়েছে।
টুভালুতে মূলত দেখার মত মত সমুদ্র ছাড়া আর কিছু নেই। সকল ট্রাভেল এক্টিভিটি সমুদ্র ঘিরে।
টুভালুর Funafuti Marine Conservation Area সুন্দর একটি ডাইভিং স্পট। যদিও ২০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার একটু বেশি হয়ে যায় স্কুভা এর জন্য।

স্থলে ঘুরে দেখার মত একটি লাইব্রেরি , জাদুঘর আর মহিলাদের তৈরি জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই দেখার নেই।
টুভালুর খাবার
টুভালুয়ান খাবার মূলত সরল, স্থানীয় এবং সুস্বাদু। খাবারগুলিতে মূলত চাইনিজ স্টাইলের খাবার থাকে, যদিও স্থানীয় মাছ এবং তরকারী খাবার পাওয়া যায়।
খাদ্য সাশ্রয়ী মূল্যের, তবে দ্বীপে খাদ্যের অভাব পরলে খাবারের দাম বেড়ে যায়।
ময়দা, চিনি, কোমল পানীয়, বিয়ার, তাজা মাছ, ভাজা মুরগি, নারকেল (বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত), পেঁপে, শুয়োরের মাংস এবং তারো (ফিলিপিন্সের রেড হর্স জনপ্রিয় এবং এইগুলো আমদানি করে আনা হয়।
টুভালুয়ানরা অনেকটা আমাদের মতই মেঝেতে বসে হাত দিয়ে খাবার খায়। রেস্তোঁরাগুলিতে আগে থেকেই রিজার্ভেশন করুন।
অ্যালকোহল ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় তবে জনসাধারণের মধ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ।


বাংলাদেশিদের জন্য টুভালু ভ্রমণ
ব্লগের শুরুর দিকে বলেছিলাম বাংলাদেশিদের জন্য টুভালু ভিসা অন্য এরাইভাল দেয়। মানে আপনি এয়ারপোর্ট থেকেই ভিসা পাবেন।
আদৌই কি যাওয়া যায়। হ্যাঁ যায়, আমি টুভালু অথোরিটির সাথে কোথা বলেছি তারা বলেছে তারা পর্যটক পাবার জন্য মরিয়া, যে কেউ গেলেই হবে, তারাই সব করে দিবে।
ত এখন চলুন দেখি কিভাবে এই আইল্যান্ড দেশে যাওয়া যায়। প্রথমেই বলি, আপনি শুধু টুভালুর উদ্দেশ্যে রওনা দিলে যেতে পারবেন না, বরং একটু মাথা খাটাতে হবে।
টুভুলুতে যাবার আগে আপনাকে যেতে হবে পাশের দেশ ফিজিতে। ফিজি সম্পর্কে ত আমরা সবাই জানি।
মজার ব্যাপার হল ফিজি আমাদের ভিসা ফ্রি এন্ট্রি দেয়। আপনি যাবেন ৪ মাস আরামসে থাকবেন।

অথোরিটির সাথেও কথা হয়েছে তাদের দিক থেকে কোন সমস্যা নেই এমনটাই তারা জানিয়েছে।
প্রাইভেসির কারণে ইমেইল এর স্ক্রিনশট দেওয়া যাচ্ছে না। আপনি নিজেই চাইলে তাদের অফিসিয়াল ইমেইলে জিজ্ঞেস করতে পারেন। দেরি করে হলেও রিপ্লাই পাবেন।
ফিজি যেতে হলেও আপনাকে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়াতে ট্রান্সিট নিতে হবে। ইন্দোনেশিয়া আবার আমাদের জন্য ভিসা ফ্রি।
কমপ্লিকেটেড হলেও লম্বা একটা আকর্ষণীয় ট্রিপ হতে পারে এটি। আপনি ফিজি উপত্যকায় গেলে আশে পাশের প্রায় সব ছোট ছোট দেশ সব ভ্রমণকারীদের এলাউ করে।
আহামরি টাকা লাগে তা মোটেও নয়। অনেকেই ত এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশ ট্রিপ এর প্লান করেন, তার থেকে বেশি কোন বাজেট লাগবে বলে মনে করছি না।
টুভালুতে রিটার্ন টিকেট ফিজি এয়ারলাইন্সে ৪৬ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
কোভিড-১৯ এর জন্য এই টিকেট আকাশ চুম্বী হলেও আমি ১২-১৩ হাজার টাকাও দেখেছি গত বছর। টিকেট এর দাম সম্পর্কে আপডেট পেতে skyscanner ওয়বসাইটে ঢু মেরে আস্তে পারেন।

সব শেষে কোথা বলা যাক টুভালু সম্পর্কে চমৎকার তথ্য
১. টুভালু প্রায় 10,000 জনসংখ্যার এক ছোট্ট দেশ, এটি কেবলমাত্র ভ্যাটিকান সিটি, মোনাকো এবং নাউরুর চেয়ে বড় এবং দুনিয়ার চতুর্থ ছোট দেশ।
2. ৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, দ্বীপপুঞ্জ আমেরিকান সেনাদের জন্য কৌশলগত অবস্থান ছিল কারণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কিরিবাতি কাছাকাছি দ্বীপপুঞ্জ জাপানী সৈন্যদের দখলে ছিল।
এই কারণে আপনি টুভালু দ্বীপপুঞ্জের অংশগুলিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিদর্শনগুলি খুঁজে পেতে পারেন, এর মধ্যে রয়েছে নুনুমিয়ার উত্তর-পূর্ব পার্শ্বে একটি পুরাতন রানওয়ে এবং নুমিয়া গ্রামের নিকটবর্তী প্রাচীরের একটি নষ্ট এবং নুকুফেটের মোতুলালো দ্বীপে আরও ধ্বংসস্তূপ includes ।
ফঙ্গাফালে দ্বীপটি সৈন্যদের প্রধান ঘাঁটি ছিল এবং সেখানেও যুদ্ধের চিহ্ন রয়েছে, পাশাপাশি টেপুকার দ্বীপে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারও রয়েছে।
টুভালুকে ইতিহাসের দুর্দান্ত গন্তব্য বানানো।
3. ৫. com.tv, নেট.tv, org.tv ইত্যাদি নাম বাদে জনপ্রিয় ‘.tv’ ডোমেনগুলি হল টুভালুর অন্তর্ভুক্ত ইন্টারনেট কান্ট্রি কোড শীর্ষ-স্তরের ডোমেন।
এটি রয়্যালটি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২.২ মিলিয়ন ডলার উত্পন্ন করে যা দেশের মোট উপার্জনের প্রায় 10% করে।
আমাদের আর বাংলা ও ইংরেজি ব্লগ পড়তে সাথেই থাকুন। আর ভাল কন্টেন্ট আসছে…
informative brother