
২০১৯ এর কথা, মুম্বাই এয়ারপোর্টে বসে আছি। কলকাতার ফ্লাইট ধরব। এরপর কলকাতা থেকে ঢাকার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টের উপরে একটা বিশেষ দূর্বলতা আছে আমার। হুদাই ঢুকে বসে থাকি। মানুষ দেখি, গল্প দেখি আর এক ছাদের নিচে গোটা দুনিয়ার সংস্কৃতি। এর চেয়ে বেশি কিছু পাবার নেশা আমার নাই। এক কোনায় এক লম্বা দাড়িওয়ালা লোক বসা। দেখেই বুঝলাম ইহুদি। কাছে গিয়ে বল্লাম শ্যালম। আসসালামু আলাইকুম এর হিব্রু রুপান্তর। মানে একই, আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। ইহুদিরা সাধানত খুব রিজার্ভ । এরা নিজেদের গোণ্ডির থেকে বাইরের মানুষের সাথে মিশে না তেমন একটা। কিন্তু উনি ব্যাতিক্রম, আমাকে বল্ল, ” হ্যালো, গুড টু মিট ইউ”.
আমি যে চরম এক্সট্রোভার্ট এইটা সবাই জানে। গায়ে পরে কথা বলে গল্প করতে ভালবাসি তবে ব্যাক্তিগত স্পেসটা বুঝি এবং সন্মান করি। তো উনাকে বল্লাম, আপনার বাড়ি ইজরাইলে? বল্ল না, ইহুদি হলেই ইজরাইলে বাড়ি হতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমার বাড়ি নেদারল্যান্ডস । ওয়াও নেদারল্যান্ডস ? আমার অনেক বন্ধু আছে ওখানে। গল্প করতে করতে আমাকে বল্ল, কিছু খাই চলো। বল্লাম আচ্ছা। আমার আবার এয়ারপোর্টে কিছু খেতে এলার্জি। মেলা টাকা দাম নেয়।তার কথায় সায় দিলাম। চলে গেলাম ফ্যান্সি একটা ক্যাফে তে। উনি রুটি, হালুয়া আর কি কি যেন নিলেন। আমি ঐ আমার প্রিয় খাবার মোমো
অবাক হয়ে দেখলাম, ইহুদি বান্দা খাবারের আগে ৪-৫ মিনিট সময় নিয়ে প্রার্থনা করছে। আমার কাছে একটু অকওয়ার্ড লাগল। কিরে ভাই, ৪-৫ মিনিট বসে এত কথা কি বলে? খাবে না? উনাকে বলেই বসলাম, এত কি প্রার্থনা করো ভাই? উনার খুব সাবলীল উত্তর, ” আহা, ইশ্বরের দানে রুটি পাচ্ছি , শুকরিয়া করব না?” আমার কাছে ব্যাপারটা বেশ ভাল লাগল। আর আমার ছোট বেলার অভ্যাস বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করা। মা এই অভ্যাসটা করিয়েছে। যদিও এখন এত ফ্রিকুয়েন্টলি বলি না। ত সেইদিন মনের অজান্তেই, বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করলাম। উনি প্রশ্ন করলেন এইটা কি বলছো? বল্লাম বিসমিল্লাহ, এর মানে খোদার নামে শুরু করলাম। কিছু করার আগে আমরা এইটা বলি। ধার্মিকতার থেকেও এক প্রকার ভাল ট্রেডিশন হয়ে গেছে আমাদের। উনি বল্লেন চমৎকার। তাহলে আমার ৫ মিনিটের প্রার্থনা ত তুমি ১ সেকেন্ডে কাভার করে ফেল্লা মিয়া
আমার ফ্লাইটের বাকি ছিল অনেক সময়। তার কেএলএম ফ্লাইটের ঘন্টা পরে গেছে। বোর্ডিং শুরু। আমাকে বল্ল, “যাই ভাই, ভাল থেকো। একদিন আবার দেখা হবে”। তুমি খুব ভাল মানুষ। এরপরে আর কোনদিন দেখা হয় নাই। মাঝেমধ্যে ইমেইল চালাচালি হত। এখন তাও হয় না।
ভ্রমন আমার পকেট ফাকা করে গল্প দিয়েছে, মানুষ দিয়েছে আর সংকীর্ণতা ভুলিয়ে বুঝতে শিখিয়েছে আমরা সবাই মানুষ। এই পৃথীবিটা আমাদের। আমরা এই পৃথীবির বাসিন্দা। আমি মানি না কোন জাত পাত ধর্মের ব্যারাকল। আমি ভ্রমনপিপাসু।