
নেপাল ভ্রমন নিয়ে লিখতে বসলাম। কি লিখব, এখনো ত সেই ঘোর এর মধ্যে আছি। মোট ১৮ দিনের ট্যুর ছিল। অনেক ঘুরেছি,কনফারেন্স এ যোগ দিলাম একটি সংস্থার,লোকালদের সাথে আলাপ হল, মানুষের বাড়িতে মেহমান থাকলাম আরো কত কি! আহা ভাবলেও ভাল লাগে।
যাইহোক, ভ্রমনের প্লান করলাম যখন একটা সংস্থা এর প্রোগ্রাম এর ডাক পেলাম। তারা আমাকে ঢাকা-দিল্লি-কাটমান্ডু এর টিকেট পাঠিয়ে দিল ১ মাস আগে। ৪ দিনের প্রোগ্রাম যদিও আমি ছিলাম ৩ দিন। আর ১৫ দিন ঘুরার প্লান করে ফিরতি টিকেট এর তারিখ বলায় ওরা সেইভাবেই কেটেছিল। জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ। আমার ফ্লাইট সকাল ৯ টায়। বাসা সাভারে হওয়ায় উত্তরায় পরিচিত এক বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে থাকি। সকাল ৬ টায় চলে যাই এয়ারপোর্টে। বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট আমার বরাবর অসহ্য লাগে। বোরডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন এ দাড়ালাম, আমাকে যেতে দিবেনা ভিসা না থাকায় (নেপাল আমাদের অন এরাইভাল ভিসা দেয়, মানে এয়ারপোর্টে নামার পর ওরাই ভিসা দিয়ে দেয়,আমাদের আর অগ্রিম নেওয়া লাগে না)। ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে পাঠাল ইমিগ্রেশন ইনেস্পেক্টর এর কাছে। উনি ইমিগ্রেশন লাইনের একটু পাশেই বসেন। উনাকে বললাম আমাকে ডিপারচার সিল দিচ্ছে না। উনি বললেন যাও আমার কথা বল আমি দিতে বলছি।


। বলার সাথে সাথে সিল দিয়ে দিল। এখানে বলে রাখি, ঢাকা এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন ইয়ং দেখলে একটু ঝামেলা পাকায় যদিও তার যথেষ্ট কারন আছে, কারন আমরা অনেকেই দেশ ভ্রমনে গিয়ে আর ফিরে আসি না। যাইহোক, ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানে এসে বসলাম, জেট এয়ারওয়েজ এর ফ্লাইট দিল্লির জন্য ছেড়ে গেল।ঢাকা-দিল্লি ফ্লাইট এ সময় লাগে ৩.৩০ ঘন্টার মত। দিল্লি পৌছে আমি পরের ফ্লাইট গেট এ গিয়ে বিমানে বসি। দিল্লি-কাটমান্ডু ফ্লাইট এর সময় লাগবে ১ ঘন্টা। বিমানে খাবার দিবে বলে আর কিছুই খেলাম না। সময় হলে চলে আসি কাঠমান্ডু তে। এই এয়ারপোর্ট নিয়ে ত সবাই জানেনই যে এটা দুনিয়ার অন্যতম ভয়ানক এয়ারপোর্ট যেখানে অনেক দূরঘটনা ঘটে থাকে। আমার ফ্লাইট ঠিক মতই ল্যান্ডিং করল। খুব ছোট্ট এয়ারপোর্ট। বাইরে বেশ ঠান্ডা। মোটামুটি ৭ ডিগ্রি যা আমার জন্য অসহ্যকর 😒 ।

প্লেন থেকে এরাইভেল গেট পর্যন্ত হেটে যেতে হয়। এয়ারপোর্টে নেমেই এরাইভেল কার্ড পুরন করতে হয় যেখানে আপনার নাম, ফ্লাইট নাম্বার আর সই দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে জমা দিতে হয়। কাজ শেষ করে ইমিগ্রেশন এর পালা। এখানে একটা কথ জেনে রাখা ভাল ,নেপাল এয়ারপোর্টে অন এরাইভাল ভিসাটা নিতে আপনাকে আগে একটা এপ্লিকেশন ফর্ম পুরন করতে হবে এয়ারপোর্টে থাকা মেশিন থেকে। খুব সহজ, মেশিনের টাচস্ক্রীন এ যা তথ্য চাইবে তা দিন শেষে একটি প্রিন্ট কাগজ নিয়ে ইমিগ্রেশন এ জমা দিন। কিন্তু আপনার এই মেশিন পর্যন্ত যাওয়া আরেক যুদ্ধ। কয়েকশত মানুষ, মেশিন মাত্র ৬-৭ টা। কয়েক ঘন্টা লেগে যাবে। মজার বিষয় হল এই কাজটি অনলাইনেও করা যায়। https://online.nepalimmigration.gov.np/tourist-visa এই লিংকে গিয়ে তথ্য আর একটা ছবি দিলেই ৩০ সেকেন্ডে ওরা আপনাকে একটা কপি প্রিন্ট করতে দিবে। সেটা নিয়ে চলে গেলেই আপনার কয়েক ঘন্টা বেচে গেল! ইমিগ্রেশন হতে আমার সময় লাগল ৩০ সেকেন্ড! কোন প্রশ্ন নয়। হাসি মুখে বলল “নেপালে আপনাকে স্বাগতম” । এয়ারপোর্ট এর ভিতর থেকে ৫০ ডলার ভাংগিয়ে নিলাম। রেট এতটাও খারাপ না। বাইরে গিয়ে সিম কিনে পাঠাও এপ এ বাইক ডাকলাম। ও হ্যা বলে রাখি আমাদের পাঠাও কিন্তু কাটমান্ডুতেও আছে যেটা খুবই গৌরবের। পাঠাও কাঠমান্ডুতে চলার সব থেকে সস্তা মাধ্যম। এয়ারপোর্ট থেকে থামেল( থামেল হল কাঠমান্ডু এর ট্যুরিস্টদের থাকার জায়গা) যেতে ট্যাক্সিতে ৫০০-১০০০ নেপালি রুপি লাগবে সেখানে পাঠাওতে গিয়েছিলাম ১৫০ রুপিতে!। চলে আসি আমার হোস্টেলে। হোস্টেল সম্পর্কে বিস্তারিত আর টিপস এন্ড ট্রিক্স আরেকদিন লিখব। হোস্টেলে যে রুমে ছিলাম সেটা ৮ বেডের। মানে এক রুমে ৮ টা বেড ও ৮ জন মানুষ। হোস্টেলে এসে ফ্রেশ হয়ে মোমোস খেলাম যেটা পাহাড়ের মানুষের প্রিয় খাবার বলতে পারেন। ভুটানে থাকা অবস্থায়ও অনেক মোমো খেয়েছিলাম আমি । তবে অনেক সময় নন ভেজ মোমো এর মধ্যে শুকরের মাংসও থাকে,সেটা খেয়াল করে নিবেন। বিকেল ৫টা বাজে আর কাঠমান্ডু তে এই শীতে ৫ টার মধ্যেই মানুষ দোকান আটকানো শুরু করে। আমার রুমের এসি ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ তাপমাত্রা সেট করে ঘুম দিলাম সন্ধ্যা ৭টায়। বেশ ক্লান্ত, সেই সকাল ৬ টায় বের হয়েছি ঘর থেকে। দুটো দেশ আর কয়েক হাজার গ্রাম পাড়ি দিয়ে আমি এখন হিমালয় কন্যা নেপালের রাজধানীতে। ভাবতেও ভাল লাগে আর কি। পরের দিন কাঠমান্ডু চশে বেড়াব এই প্লান ও স্বপ্ন নিয়ে ঘুম দিলাম।
যাত্রার ভিডিওটি দেখতে পারেন নিচে—-
(চলবে)

