
নেপালের ৩য় দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ঠিক ৮ টায়। তখনো বাইরে হাড় কাপুনি শীত। ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে ব্রেক ফাস্ট করলাম। আজকে হোস্টেল ছেড়ে নেপালের সব থেকে বড় হোটেল ইয়েক এন্ড ইয়েতি তে উঠব। ৫ তারা হোটেল। আমি ৩ তারা হোটেলে প্রচুর থেকেছি। একটু এক্সাইটেড ছিলাম ৫ তারা হোটেল নিয়ে। হোটেলের লোকেশন খুব ভাল। একদম প্রোপারেই। আমি যে প্রোগ্রামের মাধ্যমে নেপালে এসেছি তাদের ৩ দিন ব্যাপি আন্ট্রিপ্রিনিউয়ার সামিট শুরু হবে আজকেই। আজকে যাস্ট পরিচয় পর্ব । সকাল ১১ টায় থাকতে হবে। আমি আমার ব্যাগ ঘুছায়ে চলে গেলাম হোটেলে। আমার হোটেল বুকিং এর রিসেপশন কপি আমার ইমেইলে আছে। সেটা দেখালাম, কনফার্ম করে নিয়ে গেলো রুমে। বিশাল রুম । আমার কাছে চূড়ান্ত বিলাসিতা মনে হয় এইসব হোটেল গুলোকে।
যাইহোক, আমাদের প্রোগ্রাম এর বিষয় ছিল সাউথ এশিয়ার ভিলেজ ট্যুরিজম আর সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। খটকা সব শব্দ ব্যাবহার করে সবাই। আমি একটা মুভমেন্ট এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যাবস্থাপক হওয়ায় আমার এত কদর।নেপাল এসে আমিও ফাটিয়ে দিলাম সেমিনার রুমে গোটা তিনদিন। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পাই না আর আত্যবিশ্বাসী ।
৩ দিন এইভাবে গেল। অনেক বড় বড় মানুষের সাথে দেখা হল, কথা হল। কনফারেন্স রুম শেয়ার করলাম। আমার দায়িত্ব আমি পুরন করলাম যতই হোক তারা আমার ভ্রমনের টিকেট আর এত দামি হোটেল ফ্রি দিয়েছে আর তাছাড়াও দুনিয়ার জন্য ভাল কিছু করা নৈতিক দায়িত্ত্ব ।
মন পরে রইল সেই কাঠমান্ডুর পানে।
নেপাল আবারো ৩ দিন পরে সকালে আবার বের হলাম ঘুরতে । সোজা পশুপথিনাথ মন্দির

নেপাল এ শনিবার অফিস আদালত বন্ধ। আর সেইদিন ব্যাপক ভীর থাকে ধার্মিক স্থান গুলোতে। পশুপথিনাথে আসতে অনেক জ্যাম এ ভুগতে হল। আমার গায়ে লাগল না। আমি ঢাকায় থাকি আর কি।
পশুপথিনাথে ঢুকলাম । ভাবলাম ধার্মিক জায়গা সবাই সন্মানের সাথে পরিষ্কার করে রাখবে। কিন্তু হায়, একি। এত নোংরা আর দুষিত স্থান আমার বয়সে আমি দেখিনি। মেইন ইন্ট্রেন্স থেকেই একটা বিধঘুটে গন্ধ আর নোংরার পসরা। গা গিদগিদ করছিল। ভিতরে যেতেই একটু উচু স্থান বেয়ে গেলে প্রাচিন কিছু নিদর্শন দেখা যায়। ওখান থেকে উঠতে গেলে দেখলাম আরেক দৃশ্য। চিতাতে পোড়ানো হচ্ছে মৃত দেহ, একজন দুজন না,অনেকজন এক সাথে। পোড়া গন্ধ এসে লাগল নাকে

। আমার মোটেও ভাল লাগেনি। উপরে উঠে ভালই লাগল কারন পুরো জায়গাটা উপর থেকে দেখতে বেশ ভাল লাগে। কিছু ছবি তুলে চলে আসলাম বাইরে।
বাইরে এসে পাঠাও ডাকলাম। আমি একটা হোটেলে উঠলাম বৌদা রোডে। ওরা হয়ত বৌদ্ধ রোড বলে। নিশ্চিত না। হোটেলে গিয়ে গোসল করলাম আগে। ফ্রেশ হয়ে খেতে বের হলাম। বৌদা রোডে কেন এসেছি সেটা বলছি। আমার হোটেলের পাশেই একটা বুদ্দিস্ট স্টাচু আছে যেটা নেপাল এ আসলে সবাই ঘুরে দেখে।

আশে পাশেই অনেক রেস্টুরেন্ট। জাপানিস খাবার খাওয়ার খুব শখ আমার ছোটবেলা থেকেই, সামনেই দেখি একটা জাপানিস রেস্টুরেন্ট। ঢুকলাম,খেলাম তারপরেরটা ইতিহাস। পোকেট ফাকা করে দিল। আমি যে ভুলটা কখনই করিনা সেটাই করলাম। মূল্য না দেখে খাবার অর্ডার করা।
বিকেল ৪ টা। হোটেলে ঢুকে বড় জ্যাকেট টা নিয়ে চলে গেলাম সোয়াম্ভুনাথ। এটা হিন্দু নাকি বৈদ্ধদের স্থান আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি। প্রচুর ভীর । তাও বেশ লাগছে। ঐ জায়গায় একটা নালার ভিতরে টপ রাখা আছে। সেই টপে কয়েন ফালাতে পারলে তারা তাকে ভাগ্যবান ভাবে। নানান দেশের নানান প্রচলন আর কি । আমিও ২০ নেপালি রুপির ফেক কয়েন কিনলাম। ওখানেই কিনতে পাওয়া যায়। অনেক গুলাই পাওয়া যায় ২০ নেপালি রুপিতে। চেস্টা করলাম। ২ টা ফালাতে পারলাম টপের মধ্যে । অনেকেই আমাকে লাকি বলে ডাকল । দ্যাট ওয়াস যাস্ট ফান। পাহাড়ের একটু উপরে উঠলে কাঠমান্ডুর ভীষণ সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায় আর বুদ্দিস্ট অনেক নিদর্শন দেখা যায়। এই জায়গাটা আমার বেশ ভাল লেগেছে।

সন্ধ্যা ৭ টা। আগেই বলেছি নেপাল এ ৫ টার মধ্যেই জানুয়ারির শীতে দোকান ঘুছানো শুরু হয়। চলে এলাম হোটেলে। একটু রেস্ট নিলাম। হোটেলে আবার ৯ টা মধ্যে বলতে হয় কি খাব। বলে দিলাম চিকেন বিরিয়ানি। খুব খুদা লাগলে আমার ভাত জাতীয় কিছু না হলে চলেই না। রাত ১১ টার পর আবার বের হলাম। কাঠমান্ডু অনেক সেইফ প্লেস। আমার কাছে ত তাই মনে হল। সোজা থামেল চলে এলাম। অনেকেই বলেছে থামেলের নাইট লাইফের কথা। যদিও নাইট লাইফ বলতে তারা আসলে কি বুঝিয়েছে আমি জানি না।
থামেলে রাত্রে ঘুরতে আসলে বেশ ভাল লাগে। শরিরের প্রত্যেকটা অংশ ঢেকে নিয়েছিলাম বের হবার আগেই। কান টুপি, হাতের গ্লাবস, জ্যাকেট ইত্যাদি
কিন্তু ঠান্ডা এতটাই ছিল যে রুমে এসে আবিষ্কার করলাম আমার নাক থেকে রক্ত পড়ছে।
নেপাল এর খাপ ছাড়া এলটিটিউড আর ২ ডিগ্রির শীতে আমি কাহিল। একটু ঘাবড়ে গেলেও এক ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। সে আমাকে বলেছিল এরকমটা হতে পারে। তারো নাকি হয়েছিল। আমি ঘুম দিলাম। সকালে উঠে একটা গ্রুপের সাথে ভক্তপুর ঘুরতে বেরুলাম। আমি সাধারণত গ্রুপ ট্যুরে বের হই না। কিন্তু আমার হোটেলে বসে পরিচিত এক ব্রিটিশ পরিবারের বলায় গেলাম তাদের সাথে । ভক্তপুর জায়গাটা আমার বেশ ভাল লেগেছে। কাঠমান্ডুর মত নোংরা আর দুষিত না। নায়াতাপোলা, ভাতছালা দেভি মন্দির যেটাকে ওরা দুর্গা মন্দির বলে, সিধা পাকোরি ইত্যাদি জায়গা দেখে সেদিনই ফিরে এলাম ভাড়া করা গাড়িতে। অনেকেই ভক্তপুর গিয়ে রাতে থাকেন। এটা নিছক বোকামি। ভক্তপুরে থাকার জন্য কাঠমান্ডুর মত এত অফশন নেই। সাথে থাকার জায়গার দাম একটু চড়াই মনে হল।
যাইহোক, দিন শেষে অনেকদিন পর গ্রুপ ট্যুর দিয়ে বেশ ভাল লাগল আর ব্রিটিশ পরিবার আমার সংগে অনন্দিত এটাই অনেক কিছু। আনন্দ দেবার জন্যেই ত আমাদের জন্ম।
যাইহোক, রাতের খাবার এক সাথে খেয়ে তাদের গুড নাইট বলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুম দিলাম।
ওঃ হ্যা, বলতে ভুলে গেছি, হোটেল থেকে পোখারা যাবার বাসের টিকেট কেটে নিলাম।
নেপালে প্রায় সব হোটেল বা হোস্টেলে যকোন কিছু বুক করার ফ্যাসিলিটি আছে।
কালকের সকালে বাস ঠিক ৬.৩০ এ যদিও এটা মিথ্যা। ওরা ৭ টার আগে ছাড়ে না। টিকেটের
গায়ে ঠিকি লিখে দেয় ৬.৩০ এর বাস ৬ টার মধ্যে রিপোরটিং টাইম। বাস এর টিকেট নিয়েছে
৬০০ রুপি। বাসের ভিতরে নাকি আবার টয়লেট আছে বল্ল, পরের লেখায় বাস ট্রিপের একটা রিভিউ দেব।
খুব সকালে উঠতে হবে। ঘড়িতে ৫.১০ থেকে শুরু করে ৫.৩০ পর্যন্ত ১০-১২ টা পৃথক পৃথক রিমাইন্ডার
সেট করলাম যেটার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আর কি।
শুভ রাত্রি।
(চলবে)