
গোয়া ভ্রমন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার আগে ভারতের এই রাজ্য সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক—
গোয়া পর্তুগিজদের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান । গোয়ায় পৌঁছানোর পর মনে হবে আপনি বুঝি এসে পড়েছেন পর্তুগিজদের কোন এলাকায়।
পর্তুগিজ রা ১৬ শতকের শুরুতে সওদাগর হিসেবে এখানে এসে ঘাঁটি গাড়লেও, পরে তারাই এই রাজ্য শাসন করেছে সাড়ে চারশো বছর ধরে।
আরব সাগরের পাশে, পর্তুগিজ ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রদেশ। গোয়া ভারতের সবচেয়ে ছোট কিন্তু ধনী রাজ্য।
এখন আসি মুল কথায়— কলকাতা থেকে গোয়া গিয়েছি বিমানে আর একবার মুম্বাই থেকে ক্রুজ শিপে যা ছিল আমার সেরা অভিজ্ঞতা যদিও জানালা ছাড়া একটি রুমে থাকতে গুনতে হয়েছিল ৭ হাজার রুপি।
মুম্বাই থেকে গোয়া ক্রসি শিপে যেতে সময় লাগে ১৪+ ঘন্টা। জানালা ছাড়া রুমে ভুলেও থাকবেন না। সমুদ্র দেখতে যেতে হবে শিপের উপর তলায় যা বিরক্তিকর।
যাইহোক, প্রথমেই শুরু করি গোয়ায় লাক্সারি ট্রিপ দেবার অভিজ্ঞতা।
গোয়া শহরে আপনি চাইলে ইউরোপের থেকেও বেশি টাকা খরচ করে থাকতে পারেন। গোয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে আছে বিশাল রিসোর্ট আর নান্দনিক হোটেল।
ইয়াচ ট্যুর, ক্রুসি ট্যুর গুলো একটু বেশিই মজার সাথে আপনার পকেটেরও ১২ টা বাজাবে।
আমি এক রাত Deltin Royale Casino নামক একটি ক্রুসি শিপে ২৪ ঘন্টার মত ছিলাম। বিশাল এবং একে শিপ কম ক্যাসিনো বলাই ভাল ।
ভিতরে অনেক প্রকার এক্টিভিটি ও আনলিমিটেড খাবারের ব্যাবস্থা। দিন প্রতি আপনার লাগতে পারে ২০ হাজার রুপির বেশি।

গোয়া এর রিসোর্ট
গোয়া শহরে অনেক সুন্দর সুন্দর লাক্সারি রিসোর্ট ও হোটেল আছে।
আমি যতবার রিসোর্ট এর মধ্যে থেকেছি একবারো রিসোর্ট থেকে বাইরে আর যাই নি। কারন ভিতরেই অনেক এক্টিভিটি করার থাকে।
আমার ব্যাক্তিগত ভাবে Hard Rock Hotel ও Planet Hollywood Resort খুব পছন্দের।

হার্ড রক হোটেল এ ১০০ ডলার এ লাক্সারি রুম এর সাথে ব্রেকফাস্ট+ডিনার পাচ্ছেন বাফেট ফ্যাসিলিটির সাথে।
এবং এই হোটেল এর মধ্যে লাইভ গান,ড্যান্স ও পুল পার্টি হয় । এবং এই হোটেল থেকে কোল্ভা বিচে যেতে হেটে সময় লাগে ১৫ মিনিট ও লোকাল বাসে ৩-৪মিনিট ।
প্লানেট হলিউড এর ভিতরেই আছে প্রাইভেট বিচ, বিশাল এড়িয়া এবং বাফেট ব্রেকফাস্ট।
যদিও হলিউড প্লানেট এর খাবার আমার মোটেও পছন্দ হয় নি।
এরপর আসি গোয়ার লাক্সারি এক্টিভিটি নিয়ে–
১.স্কুভা ডাইভিং — স্কুভা ডাইভিং এর সম্পর্কে সবাই জানেনই। সাউথ গোয়াতে স্কুভা ডাইভিং বেশ পপুলার।
২. হট এয়ার বালুনিং–গোয়ায় আমার দেখা সব থেকে সুন্দর এক্টিভিটি হল হট এয়ার বালুনিং।
বিশাল আকৃতির বেলুনকে তাপ দিয়ে উড়ানো হয় এবং আপনি বসে থাকবেন নিরধারিত সিটে। উড়ে উড়ে দেখলেন কোস্টাল এড়িয়া। আর কি চাই।
picture collect from internet
৩. কায়াকিং—গোয়াতে কায়াকিং করার সুবিধা পাবেন মান্ডবি রিভার পয়েন্টে। গোয়াতে আর তেমন কোন স্পটে আমি কায়াকিং করতে দেখি নি।
এই ৩ টা এক্টিভিটিকে লাক্সারি ক্যাটাগরিতে রাখার কারন হল, কোন ব্যাকপ্যাকার এরকম এক্সট্রা টাকা খরচ করতে পারবে বলে আমার সন্দেহ আছে।
অন্তত আমার ব্যাকপ্যাক ট্রিপে আমার টেনেটুনে চলতে হয়।
যাইহোক, আই এম ডান ইউথ লাক্সারি।
এবার স্বল্প টাকায় গোয়া ঘোরা যাক।
লাক্সারি ট্রিপে আপনি আসলে গোয়াকে দেখতে পারবেন না। আপনাকে হতে হবে একজন এক্সপ্লোরার।
কলকাতা থেকেই শুরু করি–
কলকাতা থেকে গোয়া যেতে ট্রেন পাবেন। এভিলিটি এত না, মানে সব দিন থাকে না।
গোয়া যাবার প্লান যদি করেই ফেলেন, তাহলে ২ দিন আরো বারতি নিয়ে মুম্বাই হয়েই যান।
কলকাতা থেকে মুম্বাই এর ট্রেন পাবেন, মুম্বাই ঘুরুন এরপর সেখান থেকে ট্রেন নিয়ে গোয়া। কলকাতা থেকে গোয়া ট্রেনে যাওয়া কোন ভাল বুদ্ধি হবে না কারন অনেক সময় লাগে।
একটা বিরতি নিয়ে আরেকটা নতুন শহর দেখে গেলে ক্ষতি কি?
গোয়া তে পা ফেলার সাথে সাথে আপনার কাজ হবে একোমেন্ডশন খুজা বা কোথায় থাকবেন সেটা খুজে বের করা।
এখন কথা হল, গোয়া ত খুবই লাক্সারি জায়গা, ২-৩ হাজারের নিচে ত কোন হোটেল নেই। তাহলে সস্তায় ঘোরা হবে কেমনে?
সলিউশন হল হোস্টেল। খুব সস্তায় হোস্টেল পাওয়া যায়। বুকিং.কম এ সার্চ দিলেই অনেক হোস্টেল পাবেন।
যাইহোক, হোস্টেলে চেক-ইন করে বেড়িয়ে পড়ুন অল্ড গোয়া দেখতে। ওল্ড গোয়ায় গেলে মনেই হবে না আপনি ভারতে আছেন।
পর্তুগিজদের স্থাপত্য আর সংস্কৃতিতে ঠাসা। শত বছর পুরনো ক্যাথেদ্রালস যেমন চ্যাপেল ও সেন্ট ফ্রান্সিস জ্যাভিয়ার ও বোম জেসাস ঘুরে দেখতেই মুলত ঘন্টার পর ঘন্টা লাগবে।
আপনি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবেন না যদি ইতিহাসের প্রতি এতটুকু আকর্ষণও থাকে। গোয়াতে পর্তুগিজদের গড়া স্থাপত্যের প্রেমে পরতেই হবে আপনার।
সময় নিন, দেখুন, তারাহুরা ও হাজার খানে ছবি তুলে সময় নস্ট করবেন না। আমি সবাইকে রিকোমেন্ড করব একদিন শুধু ওল্ড গোয়াতে কাটাতে।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে চলে যান উত্তর গোয়ায়। যান বাহনের জন্য পাবেন টুকটুক।

ড্রাইভারদের সাথে প্রচুর বারগেইন করুন, তারা ১ কিলোমিটার এর জন্য ১০০০ রুপি চেয়ে বসতেও পারে।
যাইহোক, টুকটুক বা ট্যাক্সি নিয়ে চলে যান উত্তর গোয়া। ড্রাইভারকে বলবেন কালাংগুটে সমুদ্র সৈকতের কাছে থামাতে।
কালাংগুটে বিদেশি ট্যুরিস্টদের কাছে খুব পরিচিত। পানি খুব স্বচ্ছ ও ওয়াটার এক্টিভিটি করার অনেক সুযোগ পাবেন। ফুট মাসাজ পাওয়া যায় খুব সস্তায়।
কালাংগুটে বিচের পাশে মোটামুটি সস্তায়ই খাবার পাবেন। খাবার,সাথে কোক আর বিচ ভিউ, পয়সা উসুল অভিজ্ঞতা।

খাবার শেষে চলে যান বাগা বিচে। বেশি দূরে না। বাগা বিচ আমার কাছে সাধারন একটি বিচ মন হয় কেন যেন ।
সৈকতে শিক এবং মাছ ধরার নৌকা সারি রয়েছে এবং উচ্চ জোয়ারে সৈকতটি সরু হয়ে যায়।
বাগা বিচে কয়েকটা ছবি তুলে আর চাইলে একটু বোটিং করে চলে যান আরজুনা বিচে। আরজুনা বিচে লোকালদের গাদাগাদি আর টিপিক্যাল ভারতিয় ধাচের।
পাশেই পাবেন আরজুনা মারকেট যেখান থেকে আপনি টি-শার্ট ,জুয়েলারি পন্য কিনতে পারবেন।
খানিকটা আমাদের কক্সবাজারের মতন। যদিও মারকেটে ঘুরতে আমি বেশ মজা পেয়েছি।

গোয়া আসলেন আর নাইট লাইফ উপভোগ করবেন না তা কি হয়? বাগা সৈকতের পাশেই টিটো”স বার এ চলে যান, নাচ গানের সাথে আনলিমিটেড মাস্তি করার সুযোগ।
চাইলে এলকোহোল ও পান করতে পারেন। আমি মায়ের ভাল ছেলে বলে ড্রিংকস করি না। রাতটা পার্টি করে কাটালে পরের দিন ঘুমাতে ঘুমাতে কাটাবেন।
স্বিদ্ধান্ত আপনার কি করবেন।

যাইহোক, ধরে নিলাম আপনি অধিক রাত্র পর্যন্ত পার্টি করেন নি। সকালে ঘুম থেকে উঠুন ও প্রস্তুতি নিন সাউথ গোয়া যাবার।
গোয়ার অভিজাত অংশ এবং আবার সব চেয়ে পছন্দের জায়গা। কোল্ভা আমার সব থেকে প্রিয় বিচ।
সাউথ গোয়া মুলত কোল্ভা আর পালোলেম কেন্দ্রিক। এই দুই বিচেই বেশিরভাগ পর্যটক যায়।
কোল্ভাতে নানা রকম এক্টিভিটি করা যায় এর মধ্যে আছে সারফিং, ডলফিন দেখা শিপে করে এবং বারগেইন করলে তুলনামুলকভাবে সস্তাতেই পাওয়া যায় ১-২ ঘন্টার এক্টিভিটি প্যাকেজ। স্বল্প টাকায় ভ্রমন করলেও চেস্টা করবেন এরকম অভিজ্ঞতা নেবার।
সাউথ গোয়াতে ভাস্কো ডা গামার এলাকা ঘুরে আসতে পারেন। নাবিক ও এক্সপ্লোরারা ভাস্কো ডা গামা সেখানে এসেছিল ও থেকেছিলেন।
একটি পোর্ট কলোনি মাত্র তবে ইতিহাসের এত বড় একজন মানুষের সেই কলোনি দেখার লোভ আমি সামলাতে পারি নি।

সব শেষে বলতে চাই
গোয়া অনেক বড়। সময় নিয়ে ঘুরুন।
গোয়া গেলে যে শুধু বিচ দেখতে হবে আর রাতে পার্টি করতে হবে এটা একটা ভুল আইডিয়া.
যেটা আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই আছে। গোয়ায় আমার শেষ ভ্রমনে আমি একটি বিচেও যাই নি।
ঘুরেছি গ্রাম সাইড, হেটেছি আর পর্তুগিজদের সংস্কৃতি শিখেছি।
গোয়াতে এখনই হাজার পরিবার পাবেন যারা পর্তুগীজ ভাষায় কথা বলে, তাদের সাথে মিশুন,শিখুন।
চাইলে হোম স্টে করতে পারেন। অনলাইনে এয়ারবিএনবি বা বুকিং.কম এ অনেক রুম পাবেন যা কোন পরিবার চালায়।
খুবই অল্প টাকায় তারা আপনাকে রাখবে ও খাওয়াবে।