
আমার ষষ্ঠবারের মত ভারত ভ্রমনের জন্য মন স্থির করলাম। ভাবলাম কোথায় যাওয়া যায়? ভারতে ত কম ঘুরলাম না । ঠিক করলাম আবার সেই বিখ্যাত ত্রিভুজে একটা ট্যুর দিয়ে আসি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসেও ঐ জায়গায় ভ্রমন করেছি যেটা ছিল আমার জিবনের প্রথম দেশের বাইরে ভ্রমণ। অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে ঐ রুটটায়
যাইহোক, ঢাকা থেকে সোহাগ এলিট এসি বাসে করে বেনাপোল গেলাম , দাম ছিল ১৬০০ টাকা । ভাল সিট ,বসতেও বেশ আরাম । রাত ১১ টার বাসে বেনাপোল গিয়ে নামল ঠিক ৬ টায়। দাত ব্রাশ করে কিছু খেলাম , খেতে খেতে ৭.৩০ বেজে গেল। দাঁড়িয়ে গেলাম ভ্রমণ ট্যাক্স দেবার লাইনে। বিশাল লাইন আর দালালদের দোউরাত্য অনেক। পাক্কা ১.৩০ ঘন্টা লাগল ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে। যারা বেনাপোল হয়ে যাবেন তারা অবশ্যই আগে থেকে ব্যাংক এ ট্রাভেল ট্যাক্স নিয়ে আসবেন (খুব সম্ভবত সোনালি ব্যাংক এ ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়া যায়)। যাইহোক, ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে ইমেগ্রেশন শেষ করে ভারতের কাস্টমসে ঢুকতে ১০০ টাকা দাবি করে বসল আমি দেই নি, আমার ব্যাগ তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে ছেড়ে দিল, একটু সময় গেল এই আর কি। ভারতের ইমিগ্রেশনও ভাল ভাবেই শেষ করে পেট্রোপল চলে আসলাম, এটা ভারতের প্রান্ত, মানে আমি ভারতের চলে এসেছি। টাকা ভাঙ্গিয়ে গ্রিনলাইন বাসে করে চলে আসলাম কোলকাতা এয়ারপোর্ট( এয়ারপোর্ট এ নামার কারন আশেপাশে কোন একটা হোটেলে থাকব এবং পরদিন খুব সকালে আমার দিল্লির ফ্লাইট ধরতে হবে)। বর্ডার থেকে কলকাতা এয়ারপোর্ট এ আসতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। ট্রেনে বনগাঁ হয়েও আসা যায় তাতে ২ ঘন্টার বেশি লাগে না। এয়ারপোর্ট এ নেমে হোটেলে চেক ইন করলাম। ভাড়া ২৫০০ এর মত, এয়ারপোর্ট এরিয়ায় ভাড়া একটু বেশিই। পরদিন সকালে আমার ফ্লাইট সকাল ৫ টায় এয়ারএশিয়ায় । আর ফ্লাইট টাও ৩+ ঘন্টা দীর্ঘ ।সকাল ৭ টা ৩০ এর ফ্লাইট ছিল,আমি সকাল ৬টার আগেই এয়ারপোর্টে চলে যাই,মোমোস আর কোক খেয়ে ঘড়ির দিক তাকালাম বাজে ৬.৩৪।অনেক সময় আছে, তাই ফাকা এক জায়গায় বসে কানে বিটস এর হেডসেট দিয়ে ফুলস্পিডি গান শুনি।অনেক্ষনপর দেখলাম বিমানের ৩-৪ জন স্টাফ ছোটাছুটি করছে,আমি ভাবলাম হয়ত কেউ একজন মিসিং,
পরে মনে মনে সেই ব্যাক্তিকে বললাম,”মানুষ ক্যাম্নে এত উদাসিন হতে পারে যে ফ্লাইট টাইমে উপস্থিত নাই?”যাইহোক,৫ মিনিট পরে একজন স্টাফ আমার পিঠে নক করলেন,বললেন স্যার আপনি কোথায় যাবেন? (উনি আমাকে পিছন দিয়ে ডেকেও কোন সারা নাপেয়ে কাধে ট্যাপ করেছে).আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম, দিল্লি কেন?উনি বললেন এয়ার এশিয়ায়?
আমিঃ হ্যা।আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার নাম ফাহাদ বিন হুসনে আলি?আমিঃ হুম, কিভাবে জানলেন?অফিসার : স্যার আপনার জন্য প্লেন প্রায় ১৫ মিনিট যাবত বোর্ড করে বসে আছে, এখনআমাদের উড়ে যাবার কথা, ঘড়ি দেখেন,
ঘরিতে দেখি সময় ৭ঃ৩৪.তারাহুরা করে বোরডিং হলাম প্লেনে।
প্লেনে ঢুকতেই বরাবরের মত কিউট বিমানবালারা ওয়েলকাম বল্ল না, বরং বল্ল, যান গিয়েসিটে বসুন🙄।আর এক আন্টি তার সাথে বসা একজন কে বললেন*” আজকাল কা বাচ্চেকো কয়ি সেন্স হি নেহি হ্যায় “
সিটে গিয়ে বসার সাথে সাথে পাশের লোক জিজ্ঞেস করলেন বাড়ি কই?বল্লাম কলকাতায়ই 😀,এই বিজয়ের দিনে অন্তত দেশের নাম খারাপ করতে চাই না😐।(১৬ ডিসেম্বর এর কাহিনি)#জয়বাংলা😀 ঠিক সময়ে চলে আসলাম রাজধানী দিল্লিতে। আমি একটা খুব কম দামি হোস্টেল বুক করি বুকিং.কম থেকে। হোস্টেলের নাম ছিল AN AFTER STORY. হোস্টেল এর রুম গুলো হয় একটু আলাদা। এক রুমে ৪/৬/৮ টা বেড থাকে। প্রাইভেসির নাম গন্ধও থাকে না। তবুও আমি হোস্টেল গুলোতেই থাকি কারন এই জায়গা বন্ধু বানানোর এক অসামান্য স্থান। হোস্টেল নিয়ে নাহয় আরেকদিন লিখব।
দিল্লিতে প্রথমদিন একরকম আড্ডা আর খেয়ে কাটালাম । পরেরদিন ঘুরতে বের হলাম।হোস্টেল পরিবর্তন করে চলে গেলাম সেন্ট্রাল দিল্লিতে , সেন্ট্রাল দিল্লি বললে ভুল হবে তবে সেন্ট্রাল ট্রাভেলার হাব। জায়গার নাম পাহারগঞ্জ। হোস্টেলে চেক ইন করে চলে গেলাম ঘুরতে। দিল্লিতে ঘোরার সব থেকে সেরা পন্থা হল মেট্রো । মোটামুটি সব ট্রাভেল এট্রাকশন মেট্রোর আওতায় আছে। লাল কিলা (RED FORT), জামে মসজিদ , প্রেসিডেন্ট ভবন সব কিছুই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আপনারা যারা দিল্লি ভ্রমণ করতে চান তাদের বলব দিল্লিতে ভ্রমণ করলে হোহো বাসে করে শহর ঘুরে দেখবেন। এই বাস মাত্র ৫০০+ রুপিতে সারাদিন সব যায়গা ঘুরিয়ে দেখাবে। হোহো বাস লিখে গুগলে সার্চ করলে সকল তথ্য পাবেন। দিল্লি খুব নোংরা আর দূষিত । ঢাকাবাসী হয়েও দিল্লি আপনার কাছে অসহ্য লাগবে কারন জ্যাম আর নোংরা আর মানুষের ভীর। দিল্লিতে দুইদিন থাকি। এরপর চলে যাই আগ্রায়। দিল্লি থেকে আগ্রা ৩ উপায়ে যাওয়া যায়- ট্রেন,রেল আর বিমানপথ। দিল্লি-আগ্রা পথে বিমান ব্যাবহার করতে কাউকে আমি শুনিনি , বেশিরভাগ মানুষ প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে । ভাড়া ৩০০০+ লাগে সর্বনিম্ন । আমি গিয়েছিলাম রেলে। মাত্র ১১০ রুপি। খুব সকালে রেল। আমার হোস্টেলের কাছেই ছিল রেলস্টেশন। নিজামউদ্দিন রেলস্টেশন থেকে আগ্রা ক্যান্টনমেন্টের বাস ঠিক সকাল ৭ টায় ছেড়ে যায় এবং ৩+ ঘন্টা লাগে। ট্রেনে অনেক মজা করেছি লোকালদের সাথে। দেখতে দেখতে আগ্রা এসে পৌঁছাই । আগ্রা শহর দিল্লির থেকে একটু ভাল। পরিপাটি না হলেও আমার বেশ ভাল লেগেছে। এই সে শহর যেখানে আছে তাজমহল, আগ্রা ফোরট ,ফাতেহপুর সিক্রি ইত্যাদি। আগ্রায় আমি থেকেছি “জোস্টেল আগ্রা” নামক একটি হোস্টেলে। দাম ছিল ৩৯৯ রুপি। হাইস্পিড ইন্টারনেট সাথে ভাল বেড, চিল করার মত বিশাল বড় কমন রুম আর আর গোটা শতেক দেশের ট্রাভেলার। আর কি চাই? জোস্টেল এ যারা থেকেছেন তারা এর মজা বুজবেন। আগ্রায় গিয়ে আমি পৌছাই সকাল ১১ টায়। আমি কোন প্রকার সময় ব্যয় না করেই একটা অটোরিকশা ঠিক করে ফেললাম। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ঘুরিয়ে দেখাবে ৫০০ রুপিতে। ভাল ডিল। চলে গেলাম বেবি তাজমহল দেখতে। আপনারা ঠিক কে কে জানেন যে আগ্রায় একটি নয় বরং ২ টি তাজমহল আছে। বেবি তাজমহল(২য় তাজমহল) নিয়ে আমার বানানো একটি ভিডিও)
video—— https://youtu.be/dFkMUwT8PYM
বেবি তাজমহল দেখা শেষে গেলাম আগ্রা ফোরট এ , আগ্রা ফোরট এক অসাধারণ যায়গা, আমার কাছে তাজমহল নয় বরং আগ্রা ফোরট দেখতে আগ্রা ভ্রমণ করা উচিত সবার। যাই হোক, আগ্রা ফোরট এর ভিতরে ঢুকতে বাংলাদেশিদের সম্ভবত ৯০ রুপি লাগে । অনেক গাইড পাবেন ওখানে । কেউ এক্সপেন্সিভ আবার অনেক গাইড চিপের মধ্যেই পাওয়া যায়। আমি একজন সোলো ট্রাভেলার হিসেবে গাইড নিতে পছন্দ না করলেও আগ্রা ফোরট এ একটা গাইড নেওয়া উচিত,কারন ভিতরে মহল গুলো কয়েকশো ভাগে ভাগ করা। আর এত ইতিহাস অন্যের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে হয় না। তাই ৩০০ রুপিতে একজন গাইড ঠিক করে ফেললাম। সে পুরো যায়গা ঘুরিয়ে দেখালো। কত না ইতিহাস। বইয়ের পড়া সেসব ইতিহাস বইতে পড়তে ভাল না লাগলেও সামনে দেখে বেশ লাগল। আগ্রা ফোড়ট দেখা শেষ করে চলে গেলাম তাজমহলের দিকে। কাছেই।
তখন সময় ঠিক ৫ টা। সূর্য অস্তের সময় চলে এসেছে। তাজমহলের পিছনের ইন্ট্রান্স দিয়েও তাজের ভিতরে ঢুকে বাগানে বসে বসে সূর্য অস্ত দেখা যায় । আমি আর ভিতরে গেলাম না। তাজমহলে ঢুকতে যে টাকা আর এই বাগানে বসে তাজের পিছনে দাড়িয়ে সূর্য অস্ত দেখতেও সেই টাকা! এ কেমন বিচার! চলে গেলাম আমার হোস্টেলে । মোতামুটি ক্লান্ত। সেই দিল্লি থেকে সকাল বেলা বের হয়েছি এখনো ঘুরছিই। আমি আবার একটু আলসে ট্রাভেলার। হোস্টেলে গিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকে খেলাম তারপর ঘুম। সন্ধ্যা ৮ টায় ঘুমানোর মানুষ আমি না । কিন্ত সেদিন ঘুমানোর কারন হল ঠিক ৪ টায় উঠতে হবে কারন তাজমহলে যাব আর খুব সকালে সূর্যদয় টা দেখতে হবে। আগ্রায় মোটামুটি ৫-৫.৩০ এর মধ্যে সকাল হয়ে যায়। ত লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ঘুম ভাঙল ঠিক ৪.৩০ এ । ব্রাশ করে রেডি হয়ে নিলাম।
আমার হোস্টেল তাজমহলের একদম কাছে থাকায় যেতে সময় লাগল হেটে ১৫ মিনিট। অনেক ঠাণ্ডা ।টিকেট গেটে পৌঁছে দেখি কাউন্টার খুলে নি। অতপর আবিষ্কার করলাম তাজমহলে ওপেন ও ক্লোজ টাইম সুরযদয়ের ৩০ মিনিট পড়ে টু সূর্যঅস্তের ৩০ মিনিট আগে ।আশে পাশের দোকান গুলো অনেক আগেই খুলেছে। ব্রেক ফাস্ট টা সের নিলাম। সব গরম গরম। বেশ লাগল। লোকজন দেখলাম একটু পরে লাইনে দারাচ্ছে । আমিও দাঁড়ালাম । অহ বলতে ত ভুলেই গেছি, তাজমহলে ঢুকতে এখন আমাদের জন্য ৭৪০ রুপি লাগে যেটা কিছুদিন আগেও ৫৪০ ছিল। যাইহোক, ভিতরে ঢুকলাম । সূর্যদয় হবার সাথে সাথে তাজের রুপ যেন আরো বেড়ে যাচ্ছিল। সে এক অমায়িক সৌন্দর্য । এগুলো আসলে লিখে বুঝানো যায় না। তার জন্য নিজে গিয়ে দেখতে হয়। তাজমহলে এটা আমার ২য় ভ্রমণ ছিল তাই নতুন কিছুই খুজে পেলাম না যদিও তাজমহল এমন একটা জায়গা যেখানে যতবারই যান একটা কথাই বের হবে, “ওয়াও” । এমনকি লোকাল যারা আগ্রা বসবাস করেন তারাও প্রত্যেকবার তাজমহল দেখতে গিয়ে আমাদের মতই বিস্মিত হন। তাজ থেকে বের হলাম ১২ টার পরে ।
অনেক সময় বসে থাকলাম অনেক ট্যুরিস্ট দেখলাম। বের হয়ে সোজা হোস্টেলে চলে আসলাম, গোসল আর দুপুরের খাওয়া শেষ করে বের হলাম শহর দেখতে । হোস্টেল থেকে বলল ফুড ট্যুর এ যাবে । আমি রাজি হলাম। স্ট্রিট/রাস্তার খাবার খেতে আমার ছোট বেলা থেকেই বেশ লাগে। আগ্রা শহরের ভিতরেই অনেক জায়গায় গেলাম। আসলে কোন লোকাল লোক ছাড়া এভাবে খুজে খুজে খাবারের খোজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব । ভারতের একেক স্টেট(রাজ্যে) খাবারের ভিন্নতার কথা আর কি বলব। দুনিয়া বিখ্যাত। খাবার কেটে খেতে মোটামুটি ৪ টা বেজে গেল।হোস্টেলের এক ছেলে আমাকে বলল “ভাই তুই নৌকায় চড়ে তাজমহল দেখতে চাস?তাহলে চল”। আমি ত অবাক। এটাও হয় নাকি? আর আমি যতদুর জানি এইটার পারমিশন নাই। ও বলল সমস্যা নাই চল। চলে গেলাম আগ্রার ইস্ট গেট দিয়ে ঠিক তাজমহলের পিছনে । একদমই নোংরা পানিতে ভর্তি যমুনা নদি। অনেক দুর্গন্ধ ও বটে।তবুও তাজমহলকে পিছন থেকে দেখতে দারুন লাগে, তাও আবার একদম কাছে থেকে।দেখলাম একজন মাঝি মাত্র একটা নৌকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমার লোকাল বন্ধু সব ঠিক করল। ৩০০ টাকায় ৩০ মিনিট ঘুরিয়ে দেখাবে। যমুনায় নৌকা চালিয়ে আগ্রা দেখার মজাই আলাদা। সূর্যটাও আর ৪৫-৬০ মিনিটের মধ্যে ডুব্বে। রঙের খেলায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমার বানানো একটি ভিডিও —
https://youtu.be/LWl8VE3-ZKs
৩০ মিনিট পর হোস্টেলে চলে আসলাম। আমার হোস্টেল (জোস্টেল) ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলারদের জন্য স্বর্গ । নানা দেশের ট্রাভেলারদের সাথে পরিচয় আলাপ আর আড্ডা। সবার মন মানুষিকতা আমার থেকে অনেক ভাল এবং উন্নত। অনেক কিছু শিখি মানুষের কাছ থেকে প্রতিদিন। সবার সাথে হইহুল্লুর করে ডিনার করে গান বাজনা আর পার্টি করে ঘুম দিলাম। কাল আমার জয়পুরের জন্য বাস ঠিক রাত ১২.১০ মিনিটে। রাতে বাস রাখার একটা কারন আছে। কারনটা হল, ঐদিনের জন্য আমার কোন হোটেল/হোস্টেল এর দরকার পড়ছে না। মানে সারাদিন হোস্টেল লবিতে ব্যাগ রেখে কমন এরিয়া বা ক্যাফেটেরিয়াতে শুয়ে/বসেই দিন কাটানো যায় সাথে হাই স্পিড ইন্টারনেট। আর কি চাই? এই দিন সারাদিন শুধু খেলাম আর আড্ডা দিলাম। ট্রাভেলিং এর মাঝে একটু আরামেরও দরকার আছে।
রাত ১২ টা বাজার ঠিক ১ ঘন্টা আগে বাসে স্টান্ডে চলে গেলাম। খুব ঠাণ্ডা । সরকার থেকে দেখলাম হিটার দেওয়া হয়েছে । সবাই সেটার পাশে গিয়ে আগুন পোহাচ্ছে । ভাল লাগল দেখে । আমিও তাদের দলে যোগ দিলাম। একদম ঠিক সময়ে আমার বাস চলে আসল। এসি বাস । বসতেও বেশ আরাম যদিও আমাদের দেশের বাসে লেগরুম বা পা রাখার জায়গা বেশি থাকে। যাইহোক, এসব নিয়ে ভাবার সময় নাই। আগ্রা থেকে জয়পুর পৌছালাম ঠিক ৩.৫ ঘন্টা পর। বাস গিয়ে শেষ স্টপেজ সিন্ধি বাস স্ট্যান্ডে থামল। আমি হোস্টেলও এখানেই ঠিক করে রেখেছি। বাস স্ট্যান্ড থেকে ঠিক ১ মিনিটের হাটার পথ । জয়পুরে ঠান্ডা নেই বললেই চলে। বেশ ভাল লাগল। আমার হোস্টেলে চলে গেলাম। নামঃ মুস্টাস যার বাংলা অর্থ গোফ। নাম দিয়ে কি যায় আসে।হোস্টেলে চলে গেলাম গুগল ম্যাপ দেখে। রাত ৪ টাও বাজে নি। দরজার লাগানো কলিং বেল চাপলেও কেউ না আসায় হোস্টেলের নাম্বারে কল দিলাম। একজন বিরক্ত আর অর্ধ ঘুমান্ত চোখ নিয়ে দরজা খুলে দিল। কমন এরিয়ায় গিয়ে দিলাম ঘুম। ঘুম ভাঙল ১১ টার পর। রুমে চেক ইন করে আমার খুব ভাল লাগল কারন হোস্টেল হলেও এর প্রত্যেকটা বেডের জন্য আছে প্রাইভেসির ব্যাবস্থা আর সবার জন্য একটা করে রুমের চাবি সাথে ডিজিটাল লকার। ব্রেক ফাস্ট করার ব্যাবস্থা আছে উপরেই। তারহুরা করে গেলাম কারন আর একটু দেরি হলেই মিস হয়ে যেত। ব্রেক ফাস্ট করে বের হলাম পিঙ্ক সিটি দেখতে।যারা জয়পুর সম্পর্কে জানেন তারা জানেন এর সৌন্দর্য ।
চোখের সামনে যতদুর দেখছি তাই পিঙ্ক কালারের। প্রায় ৬ কিলোমিটার সব দালান, কোঠা্ , দোকান একরকম ।সারাটা দিন জয়পুরের অলিগলি চষে বেড়ালাম । তাদের লাইফস্টাইল দেখলাম। ভারতের আলাদাআলাদা রাজ্য তাদের মত করে অভিভূত করে। দিনের শুরুটা পিঙ্ক সিটি দিয়ে শুরু করে শেষ করলাম হোস্টেলে এসে। এখানে বলে রাখি, জয়পুর আমার কাছে অনেকটা ওভাররেটেড মনে হয় । মানে এই শহরকে নিয়ে যতটা বলা হয় এই শহর ততটাও গ্লামার বা অবাক করার মত কিছু নেই। আমি শহরের কথা বলছি দেখার নিদর্শন গুলোকে নিয়ে না । হোস্টেলে এসে প্রায় ১৬ দেশের বন্ধুদের সাথে কমন রুমে বিশাল টিভিতে মুভি দেখলাম আর ক্রিসমাস পার্টিতে অংশ নিলাম। ঘুমাতে গেলাম রাত ২ টায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ঠিক ৮ টায়। ব্রেকফাস্ট এ রুটি,জ্যাম,বাটার, অমলেট খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম জয়পুরের বিশেষ স্থান গুলো দেখতে। আমার পরিচিত এক ভাই ৩০০০ টাকায় ৬ সিটের একটা গাড়ি ঠিক করলেন। ড্রাইভার সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবেন সাথে গাইড হিসেবেও কাজ করবেন। বলে রাখি জয়পুরের প্রায় সব দেখার মত জায়গা গুলোই টাকা দিয়ে দেখতে হয় আর একটু অসস্তা মনে হল আমার কাছে। হাওয়া মহল থেকে এম্বার ফোরট, সিটি প্যালেস, জান্তার মান্তার, জল মহল আরো কত কি। সব দুর্গ আর মহল দেখে দুঃখ লাগে ঐসব প্রজাদের উপর যারা ঐসময় বসবাস করতেন। এদের রক্ত পানি করা কর দিয়েই এসব বিলসিতা করতেন রাজারা। কিছু কিছু সময় সুরক্ষার জন্যেও দুর্গ ও মহলের পিছনে ব্যয় করতে হত কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন মাত্রাতিরিক্ত বিলাসিতা মনে হয়েছিল। যাইহোক ,সবার পছন্দ বা চিন্তাধারা এক হয় না । জয়পুরে ২য় দিন শেষ করে খুব ক্লান্ত হয়ে হোস্টেলে আসলাম। কারন জয়পুরের দুর্গ গুলো সব সুউচ্চতায় । সিঁড়ি বেয়ে পায়ে হেটে উঠতে হয়, সাথে প্রচন্ড গরম ত আছেই । হোস্টেলে এসে ডিনার করলাম মাছ আর ভাত দিয়ে। ওদের মাছ খেতে খুব টেস্ট লাগল। রাস্তার পাশে একটা দোকানে খেলাম। আমার পাশে এক ভারতীয় এর সাথে কথা হচ্ছিল , বললাম আমি বাংলাদেশি ইত্যাদি ইত্যাদি। সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “মাছ খেতে ভালোবাসো? দেখলাম বেশ আরাম করে খেলে”। আমি উত্তর দিলাম, আমি বাঙ্গালি। আর কিছু বলি নি, সে বুঝে গেছে। হোস্টেলে এসে ঘুম দিলাম কালকে ৯ টায় দিল্লির জন্য বাস। দিল্লি ফিরে যাচ্ছি কারন দিল্লি থেকে কলকাতা ট্রেনে যাব। ক্রিসমাস থাকায় কোন ট্রেন টিকিট পাচ্ছিলাম না, তাই বাধ্য হয়ে দিল্লি হয়ে যেতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম বাসের জন্য অপেক্ষা, নন এসি একটা বাস বুক করলাম টাকা বাচানোর স্বার্থে । বাস কাউন্টারে গেলে আমাকে জানালো বাস এ সমস্যা। যেতে দেরি করবে। বাংলাদেশের মত এই সমস্যা ভারতীয় লোকাল বাসেও আছে যদিও ট্যুরিস্ট বাসে কোন সমস্যা হয়েছে বলে শুনি নি, আর হলেও তাদের বিকল্প বাস থাকে। যাই হোক, ভোগান্তির শুরু এখানে। মাত্র কিছু টাকা বাচাতে নন এসি লোকালে যাওয়া আমার সব থেকে খারাপ স্বিদ্ধান্তের মধ্যে একটা ছিল। রাত ১২ টায় বাসে উঠে দিল্লির জন্য রওনা দিলাম। বাস ভালই। আমি বরিশালের মানুষ। তাই বাস যতই খারাপ হোক, আমার জন্য ভাল। বাস ছাড়ার ৩০ মিনিট পর আরেক ভোগান্তি । একি বুক ধরে যাচ্ছে ঠান্ডায় সাথে বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। এসি বাস হলে তাপ নিয়ন্ত্রনে থাকত। সেদিন দিল্লিতে ১২ বছরের সব চেয়ে বেশি শীত পরেছিল, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আমার জন্য ১৫ এর নামলেই সমস্যা। আমি চরমভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। জামাকাপর ব্যাগ থেকে বের করে আরো পরে নেই। কিছুতে কিছু কাজ হয় না । বাস মাত্র ১ ঘন্টার মত এসেছে আরো ২+ ঘন্টা যাবে। হঠাত করে চরমভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রনই ছিল না। যাইহোক, ১৫-২০ মিনিট পর বাসের কন্ডাক্টর আমার দিকে তাকিয়ে বুজতে পারে আমি চরমভাবে অসুস্থ। বাস থামানো হয়। আমাকে একটা গায়ের চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় তারপর একটু ভাল লাগছিল। সে যাত্রায় বেচে গেছি আর কি। দিল্লি এসে পাহারগঞ্জ এর আশে পাশে নেমে উবার এ করে একটা হোটেলে গিয়ে এসিতে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে ঘুম দেই। তখন প্রায় ৪ টা বাজে। আজকে বিকাল ৫ টায় আবার ট্রেন কলকাতার উদ্যেশ্যে। আমার হোটেলের পাশেই নিউ দিল্লি ট্রেন স্টেশন। তাই এত তারাহুরা নেই । ভারত ভ্রমনের ইতিটা খুব ভালভাবে হল না কারন দিল্লি থেকে কলকাতা যেতেও সময় লেগেছিল ২২+ ঘন্টা। মানে ট্রেন দেরি করেছিল। যেখানে ১৬+ ঘন্টায় যাওয়া সম্ভব সেখানে আমার পুরো দিন লেগেছে।
ভারত ভ্রমণ করতে আমার বরাবরই ভাল লাগে। এই দেশটাকে সৃষ্টিকর্তা সব দিয়েছে তার নিয়মতের ভান্ডার থেকে।
আবার আসিব ফিরে হে ভারতমাতা ।
ছবি পেতেঃ https://www.facebook.com/travelshuvo
ইউটিউবঃ https://www.youtube.com/channel/UCy7s5N9jaZMEvGPXaqp6YGw
ইনেস্টাগ্রামঃ https://www.instagram.com/fbhtraveler/
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/fahadnbinhusneali